আজ বুধবার, ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রোবটরা চালায় যে হোটেল

রোবট নিয়ন্ত্রিত হোটেল- একটু চিন্তার বিষয় বটে। যেখানে একটি হোটেল পরিচালনা করা মানুষের জন্য কষ্টসাধ্য ব্যাপার সেখানে রোবট নিয়ন্ত্রিত হোটেলের কথা চিন্তা করাটা একটু দূরহই। কিন্তু সত্যিই এমন হোটেল চালু হয়েছে জাপানে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পারমানবিক বোমায় বিধ্বস্ত জাপানের নাগাসাকি এলাকার সাসেবোতে হুইস বোস থিম পার্কের কাছেই এ হোটেলটির অবস্থান। হোটেলটির নাম হ্যান না হোটেল। জাপানি ভাষায় ‘হ্যান না’ অর্থ অদ্ভুত। আসলেই অদ্ভুত ব্যাপার এটি। কারণ সম্পূর্ণ হোটেলটাই রোবট নিয়ন্ত্রিত। হোটেলের সব কর্মচারী রোবট। হোটেলে প্রবেশের শুরু থেকে অতিথিদের রুমে পৌঁছে দেয়া, খাবার সরবরাহ করা, রুম পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ সবই করবে রোবট।
হ্যান না হোটেলটির ডিজাইন করেন টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্য ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল সাইন্স নিয়ন্ত্রিত কাওয়াজোরি ল্যাব ও কাজিমা করপোরেশন। এ দুই প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত প্রয়াসে ৭২টি রুমসহ এ বছরের ১৭ জুলাই প্রাথমিক ভাবে যাত্রা শুরু করে হোটেলটি।

হোটেলের প্রবেশ মুহূর্তে অথিতিদের চোখে পড়বে তিনটি ডেস্কসহ অভ্যর্থনা কক্ষ- যেখানে অভ্যর্থনা জানাবে একটি রোবটিক ডাইনোসর, একটি মেয়ে রোবট ও একটি শিশু রোবট। হোটেলে আগমনকারীরা ডেস্কে রাখা টাচ প্যাডে সব তথ্য সরবরাহ করার মাধ্যমে রুম বুকিং দেবেন। আর তখনই ফেস রিকগনিশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে রোবট তার ডিজিটাল ছবি তুলে রাখবে। এ ছবি পরবর্তী সময়ে হোটেল চেকইনসহ বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করবে। রুম বুকিং দেয়ার পর অতিথিদের কক্ষ চিনিয়ে দেয়া, তার মালামাল বহন করার দায়িত্বও রোবটের। আপনার লাগেজ যদি ছোট হয় তবে রোবট নিজেই সেটা বহন করবে। আর লাগেজ যদি খুব ভারি বা বড় হয় তবে চিন্তার কোনো কারণ নাই । কারণ সেখানে আপনার মালামাল বহন করার জন্য রোবটিক বাহক প্রস্তুত রয়েছে। আপনি ইশারা করা মাত্রই সে মালামাল বহন করে আপনার বরাদ্দকৃত সুরক্ষিত লকারে রেখে দেবে। আপনার ব্যাগ থেকে কিছু বের করতে চাইলে, লকারের সামনে দাঁড়ালে ফেস রিকগনিশন প্রোগাম আপনাকে ট্রেস করবে। আপনার ছবির সঙ্গে মিলে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে লকারটি খুলে যাবে।
হোটেলের প্রত্যেকটি রুম তালা-চাবি বিহীন। অতিথির ফেস রিকগনিশনের মাধ্যমে তার রুম আপনা আপনি খুলে যাবে। কেউ যদি তার রুম ব্যতীত অন্য রুমে ঢুকতে চান তা পারবেন না। সে জন্য অবশ্যই রুম বরাদ্দকৃত নির্ধারিত অতিথিকে প্রয়োজন হবে। কারণ তার ডিজিটাল ছবির মাধ্যমে রুমটি নেয়া হয়েছে। এমনকি রুমের ভেতর সব লাইট, ফ্যান, এয়ার কন্ডিশনার সবই সংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত। অতিথি যখন রুমের বাইরে যেতে ইচ্ছে পোষণ করবেন তার পূর্বে তাকে সুইচ অফ করতে হবে না, আবার যখন রুমে প্রবেশ করবেন তখন সুইচ অন করতে হবে না । স্বয়ংক্রিয়ভাবে অতিথির যাওয়া বা আসার সংকেত পেলেই সুইচ অফ-অন হয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, রুমের এয়ার কন্ডিশনও স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত। অতিথির অতিরিক্ত ঠাণ্ডা বা গরম অনুভূত হওয়ার আগেই সে তার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করবে।
হোটেলটি এত আরামদায়ক হওয়া সত্ত্বেও রুমের ভাড়া কিন্তু সাধ্যের মধ্যে। এক রাতের জন্য প্রতিটি রুমের ভাড়া পাঁচ হাজার ইয়েন (জাপানি মুদ্রা) বা মাত্র ৪৩ ডলার।
সব কিছুই রোবট নিয়ন্ত্রিত হলেও হোটেলের মালিক কিন্তু রোবট নন। অতিথিদের আরামদায়ক পরিবেশে বসবাসের সুযোগ করে দেয়ার অভিনব এ প্রযুক্তি নির্ভর হোটেলটির মালিক হিদিও সাওদা, যিনি জাপানের স্বনামধন্য ব্যবসায়ী।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ